Saturday, December 3, 2016

কি করে বোঝা যাবে একটা ভাল জাতের গরু।







একজন খামারির কথা.........
কি করে বোঝা যাবে একটা ভাল জাতের গরু। শুধুই কি গায়ের রং নাকি আরো বিষয় আছে যে গুলো আমাদের জানা দরকার। আমার কাছের কিছু বন্ধুরা জানতে চাই কিন্তু আমি নিজেও অনেক অনভিজ্ঞ।তবে আমার খুদ্র জ্ঞ্যানে আমি গরু কেনার সময় যে বিষয় গুলো দেখি তা হল:

বকনা বাছুরের ক্ষেত্রে: গায়ের রং হলস্টন ফ্রিসিয়ান গরুর মত কিনা, বয়স অনুযায়ী এর সঠিক ব্রিদ্ধি হয়েছে কিনা, এর গায়ের পশম গুলো উজ্ঞল আর চামড়া পাতলা, জিভ সাদা কিনা, অসুস্থ গরুর চোখের দিকে তাকালেই বোঝা যাবে, চোখ হতে হবে উজ্জল, সুস্থ বাছুর চঞ্চল আর ছুটাছুটি করবে, মাথা ছোট-ঘাড় লম্বা থাকবে। অসুস্থ বাছুর বেশীর ভাগ সময়ই বসে থাকবে আর গায়ের পশম গুলো খাড়া হয়ে থাকবে এবং খেতে চাইবেনা। ভাল জাতের বাছুর কেনার সময় এর মা কতটুকু দুধ দিত যা জানতে পারলে ভাল।

গাই গরুর ক্ষেত্রে: গায়ের রং হলস্টন ফ্রিসিয়ান গরুর মত কিনা, সকালে-বিকালে মিলে কতটুকু দুধ পাওয়া যায়, ভাল জাতের সদ্য প্রথম বিয়ানের গাই গরুর ২ দাত মাত্রই ওঠে থাকবে , মাথা ছোট, ঘাড় লম্বা, চোখ উজ্জল, শরীরের পিছনের অংশ যথেষ্ট ভারী আর সামনের দিক সরু লম্বাটে হবে। গরু হবে অনেক উচা লম্বা, জিভ সাদা।বেশী দুধ পেতে হলে ২ বিয়ানের গরু কেনাই ভাল। প্রথম বিয়ানে ৪ দাত হলে বুঝতে হবে গরুর প্রথম বীজ দেরি করে ধরেছে আর বয়স্ক কিছুটা। গরুর দাত আর শিং দেখেই একমাত্র বোঝা যাবে এর বয়স কত। ভাল দুধের গরুর ওলান থেকে পেট পর্যন্ত যে রগ গুলো দেখা যায় তা বেশ স্পষ্ট হয়ে মোটা আক্রিতির থাকবে।

গাভীন গরুর ক্ষেত্র: গায়ের রং হলস্টন ফ্রিসিয়ান গরুর মত কিনা, মাথা ছোট, ঘাড় লম্বা, শরীরের পিছনের অংশ যথেষ্ট ভারী আর সামনের দিক সরু লম্বাটে হবে। গরু হবে অনেক উচা লম্বা, জিভ সাদা, চোখ উজ্জল। প্রথম বিয়নের ৫-৬ মাসের গাভীন গরুর কোন দাত উঠবেনা আর ৯-১০ মাসের গাভীন গরুর ২ দাত হবে। গরুর ওলানের আকার বড় এবং নরম ঢিলেঢালা হবে। অনেক সময় বড় ওলান হলেই যে গরু দুধ বেশী দেবে এই ধারনা করে আমরা বেশী দাম দিয়ে কিনে ফেলি গরু বাচ্চা দেবার কিছুদিন আগেই। ওলান বড় হলেই যে দুধ বেশী দেবে এই ধারনা ভুল।
এছাড়া গরু কেনার সময় হাটায়ে দেখতে হবে পায়ে কোন সমস্যা আছে কিনা। অসুস্থ গরু বেশীরভাগ সময় বসে থাকবে আর কিছুক্ষন দাড় করিয়ে রাখার পর আবার বসে পরবে, খেতে চাইবেনা। দুই খুর ভাল করে দেখতে হবে কোন রোগ আক্রান্ত হয়েছে কিনা। কিছু গরুর দুই খুরের মাঝে কিছু মাংস বাড়তি থাকে এমন হলে এই গরু গুলো খুরার এক জাতীয় রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।

আমি এগুলো কোন বই পড়ে শিখিনি, গ্রামে গ্রামে হেটে হেটে মানুষের সাথে কথা বলে শেখা।তাই অনেক ভুল থাকতে পারে। তবে আমার অনেক অভিজ্ঞ বন্ধুরা আছেন যারা লেখাপড়া করেছেন তাদের থেকে আরো ভাল কিছু জানতে চাই। শেয়ার করে জানাবেন। এটা অনেকের জিজ্ঞসা।

বি:দ্র: কিছু ভাল জাতের গরুর ফটো দিলাম যা বিভিন্ন জায়গা আর কিছু ফেসবুক বন্ধুদের থেকে কপি করা উদাহারন হিসেবে নেয়া যাতে করে আমরা গরু কেনার সময় এই রং গুলোর মতই মিলিয়ে দেখে কিনতে পারি, হুবহু এক রকমই হবেনা তবে অনেকটা এসবের মতই হবে।


(১) সল্প বাজেটে আপনি কড়িগ্রামের ভুরুংগামারী, নাগেশ্বরী, যাত্রাপুরা, লালমনিরহাটের বড়বাড়ী, দিনাজপুরের কাহা‌রোল, খুলনার বেতাগা হাট থেকে নিতে পারেন।
(২) মধ্যম বাজেটে এর মধ্যে শাহীওয়াল/শংকর জাতের ষাড় কিনতে চান তাহলে বগুড়ার বুড়িগন্জ, ঘোড়াধাপ, মহাস্থান, ডাকুমারা, জয়পুরহাট, পাবনার চতুর্বাজার।
(৩) বাজেট যদি ৫০,০০০ টাকার উপরে হয় তাহলে অবশ্যই কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গার হাট, বাইল্যাপারা, চুয়াডাঙ্গার শিয়ালমারী উত্তম।
(৪) শুধু বকনা, গাভীন, দুধের গাভী কিনতে চাইলে বগুড়ার দুপচাচিয়া থানার ধাপের হাট উত্তম। ঢাকার কাছে পাড়াগাঁও, কালামপুর, আশুলিয়া, খুলনার শাহাপুর হাটে ও মাঝে মধ্য ভাল গাভী পাওয়া যায়।
(৫) শুধু ইন্ডিয়ান বলদ ও নেপালী বড় গরু কিনতে চাইলে অবশ্যই বেনাপোলের পুটখালী এবং সাতক্ষীরার বৈখালী যেতে হবে।
(৬) যদি দেশী লাল বলদ গরু কিনতে চান তাহলে প্রতি শনিবার জয়পুরহাট যেতে হবে।
(৭) যদি শুধু দেশী বাছুর কিনতে চান তাহলে যেতে হবে চাঁপাই এর সোনাইচন্ডী ও তর্তিপুর হাট।
(৮) মহিষ কিনতে হলে কুষ্টিয়ার আলমডাঙ্গা এবং চাঁপাই এর সোনাইচন্ডী হাট।
(৯) যদি শুধু অষ্টেলিয়ান এবং ক্রস বাছুর কিনতে চান তাহলে পাবনার ঈশ্বরদীর অরনখোলার হাট।
(১০) এছাড়া রাজশাহীর সিটি হাট, যশোরের সাতমাইল এ ভাল গরু আগে উঠত কিন্তু ইন্ডিয়ান গরু না আসাতে ওখানে এখন তেমন ভাল গরু উঠে না।
(১১) কেউ যদি দেশী জাতের খাটো বুট্টী টাইপের গরু কিনতে চান তাহলে অবশ্যই দিনাজপুর এবং রংপুর এর হাট গুলো থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
(১২) আরসিসি কিনতে হলে যেতে হবে চট্টগ্রাম এর সাতকানিয়া, আনোয়ারা উপজেলায়। এই জাতটা দীর্ঘমেয়াদের জন্যে ভাল।
এর বাইরে সাভার, যশোর, চট্রগ্রাম মিলিটারী ফার্মে ভাল জাতের বাছুর ‍(৪-১২ মাস) নিলামে কিনতে পাওয়া যায়। নিলামে ৭/৮ এর লট (ভাল মন্দ মিলিয়ে) কিনতে হয়। সাধারনত বছরে ৩/৪ বার নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। কোন দালাল এর মাধ্যমে না যেয়ে সরাসরি নিকটস্থ ফার্মে যোগাযোগ করলে / নিয়মিত ই্ত্তেফাক পত্রিকায় নজর রাখলে নিলামের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। নিলামে কেনা গরুর দামের উপর ভ্যাট ও অগ্রীম আয়কর পরিশোধ করতে হয়।
আরও কোন তথ্য / মতামত কারো কাছে থাকলে দয়া করে জানাবেন।

0 comments:

Post a Comment